ব্রিটিশ শাসিত পাক ভারত উপমহাদেশে থেকে শুরু করে আজকের এই এক বিংশ শতাব্দীর স্বাধীন বাংলাদেশ নারী শিক্ষা প্রসারে হাতে গোনা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে “নারী শিক্ষা মন্দির" তাদের মধ্যে একটি অনন্য নাম আজকের শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নারী শিক্ষা মন্দির পরিচিতি নাম । তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত এ পাক ভারত উপমহাদেশে বাংলার নারী সমাজ যখন উপেক্ষিত ছিল , ছিল অজ্ঞানতার অন্ধকারে , নিমজ্জিত , শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত সেই অন্ধকারেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুগে পশ্চাদপদ নারী সমাজে ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর অঙ্গনে নারীদেরও প্রতিষ্ঠিত করার মহান ব্রত নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ত্যাগী ও তেজস্বী অসাধারন শিক্ষানুরাগী নারী স্বর্গত লীলাবতী রায় (নাগ) ১৯২৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারী এই নারী শিক্ষা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । ঢাকা মহানগরীর পুরানো অভিজাত এলাকা র্যাঙ্কিন স্ট্রিটের একটি ছোট্র একতলা বাড়ীতে মাদুর পেতে চলতো এর ক্লাস , ছাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র তিন জন । তখনকার দিনে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা ছিল এক দুঃসাহসী ভাবনা , ঢাকাবাসী সেদিন অবাক হয়ে দুঃসাহসী এই নারী লীলা রায়ের স্কুল প্রতিষ্ঠানের কথা জেনে ছিল । প্রতিষ্ঠানটির উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন অনেক বিশিষ্ট নাগরিক । তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী তৎকালীন জাতীয় অধ্যাপক ডঃকাজী মোতাহার হোসেন । ১৯২৯ সালে ১৪ নম্বর ওয়্যার স্ট্রীটে প্রাতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত হয় । ত্রিশের দশকের শুরুতে ২০ নম্বর হাটখোলা বোর্ডে । শিক্ষাব্রতী এই স্থপতি নিজস্ব ১.৬৪ একর জমির উপর একটি বাড়ীতে প্রতিষ্ঠানটি পাকাপাকি ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন হাটখোলায় স্থানান্তরিত হওয়ার পরে নারী শিক্ষামন্দিও হাইস্কুলে উন্নীত হয় । প্রকৃত পক্ষে স্কুলটি কোন সাধারণ মেয়েদের স্কুল ছিল না । যে বয়স্ক শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার আজকের দিনে আমাদের প্রধান লক্ষ্য তারই ব্যবস্থা ছিল এই প্রতিষ্ঠানে প্রারম্ভিক কাল থেকে । এ সময় স্কুলের কর্মক্ষেত্রে তিনভাগে বিভক্ত ছিল ক) সাধারন উচ্চ শিক্ষা খ) কোচিং ক্লাস, বয়স্ক শিক্ষা গ) বিশেষ বিভাগ ( তৎকালে যারা কোলকতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে ইচ্ছেুক ছিল তাদের বিশেষভাবে এই বিভাগে পড়া হতো । এছাড়াও চিত্রাঙ্কন ও সংগীত শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। বস্তুত নিম্মবিত্ত ও নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দানে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল । স্কুল স্থাপনের মাত্র চার বছর পরই রাজনৈতিক কারনে দেশপ্রেমিক লীলা রায় (নাগ) আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন । এরপর এবং পর্যায়ক্রমে যারা শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও সুনিপুন পরিচালনায় নারী শিক্ষা মন্দিরের যশ ও খ্যাতি হয়ে পড়ে বিশ্রুতির কাহিনী । এই ঐতিহ্যমন্ডিত বিদ্যাপীঠটি যথাযথই সক্ষম হয়েছিল জ্ঞানচর্চার প্রানকেন্দ্রে পরিনত হতে । মহাকালের বিবর্তন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনেক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় নারী শিক্ষা মন্দির । যশস্বী শিক্ষকদের অনেকেই দেশ ত্যাগ করে চলে গেলে এক নিদারুন শুন্যতার সৃষ্টি হলেও ১৯৬৬ সালে অধ্যক্ষ হোসেনে আরা শাহেদ দায়িত্বভার গ্রহন করার পর আবার এর অগ্রযাত্রা শুরু হয় ।১৯৬৬ সালের সুযোগ্য পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক , কমিটির সদস্য বিচারপতি জনাব নূরুল ইসলাম , প্রাক্তন এম পি জনাব আফতাবউদ্দিন ভূঁইয়া এবং শিক্ষানুরাগী সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ এর উদ্দ্যোগে এবং তৎকালীন সফল অধ্যক্ষ বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট হোসেন আরা শাহেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নারী শিক্ষা মন্দিও সংযোজিত হলো একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী অথ্যাৎ উন্নীত হলো আপগ্রেডেড প্রতিষ্ঠানে । কালের বিবর্তনে নারী শিক্ষা মন্দির শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নামে পরিবর্তিত হলো । এরপর ১৯৭১ সালে শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ । দেশের সেই চরম দুরবস্থায় স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ।দেশ স্বাধীন হলো জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারী দেশে ফিরলেন । যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ স্বাভাবিক হতে না হতেই ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালী জাতির জনক শাহাদৎবরণ করার পর সমগ্র বাংলাদেশের মত এ প্রৃতিষ্ঠানেও সৃষ্টি হল এক গভীর শুন্যতা, বাধা প্রাপ্ত হলো এর গতি । প্রতিষ্ঠান আবার সংকটের মুখে পড়ল। পূর্বের কমিটি বাতিল হয়ে গেল। বহু প্রচেষ্টায় তৈরি হল নতুন এডহক কমিটি । প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক কারনে প্রতিষ্ঠানটি উপেক্ষিত হয়েছে বার বার , হয়েছে বৈষম্যের শিকার । সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি বল